Sayed Sarker


এমটিএর অ্যাকসেস–আ–রাইডের এমন সেবা!

উত্তর আমেরিকা সংবাদ
এমটিএর অ্যাকসেস–আ–রাইডের এমন সেবা!

করোনাভাইরাস আতঙ্ক এখন শুধু ব্যক্তি পরিসরে নয় বরং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশাল ক্ষতির সূচনা করেছে। এই মহামারির বিস্তার থেকে রক্ষা পেতে হোম কোয়ারেন্টিনের পাশাপাশি সীমিত করা হয়েছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নগরের অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, হোটেল–রেস্তোরাঁ, খেলাঘর, জিম ও পাবলিক স্কুলগুলো। এতে করেও যখন এর বিস্তার কমছিল না, তখন লকডাউন করা হলো শহর, দেশ। রাস্তা ঘাটে কমে গেল জনসমাগম। সবার ভয় একটাই, যদি করোনাভাইরাসের পরবর্তী ভিকটিমটি হয় সে!
কিন্তু এমন দুঃসময়েও এমটিএ আমাদের দিয়ে যাচ্ছে সেবা। বাস, ট্রেনের পাশাপাশি এমটিএ শারীরিকভাবে অসুস্থ জনসাধারণের জন্য দিয়ে যাচ্ছে আরেকটি সেবা, যার সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না। কিংবা জানলেও অনেকেরই সেবাটি সম্পর্কে রয়েছে কিছু ভুল ধারণা। সেই সেবাটির নাম অ্যাকসেস আ রাইড প্যারাট্রানজিট সার্ভিস (Access a Ride Paratransit Service)।
মূল বক্তব্যে পৌঁছার আগে আমরা জেনে নিই অ্যাকসেস আ রাইড প্যারাট্রানজিট সার্ভিস আসলে কি?
অ্যাকসেস-এ-রাইড (এএআর) হলো নিউইয়র্ক নগরের এমটিএর মাধ্যমে পরিচালিত শারীরিক প্রতিবন্ধী ও অসুস্থদের জন্য সরকারি পরিবহন।
অ্যাকসেস–আ–রাইড প্যারাট্রানজিট সার্ভিস শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী বা ‌অনুন্নত স্বাস্থ্যের যাত্রীদের জন্য সরকারি পরিবহন সরবরাহ করে থাকে, যারা পাবলিক বাস ও রেল স্টেশন ব্যবহার করতে সক্ষম নন। যাত্রীরা এই সেবাগ্রহণে প্রতি যাত্রায় মাত্র ২.৭৫ ডলার পে করে থাকেন।
পুরো বিশ্ব যখন ভয়াবহ করোনাভাইরাস আতঙ্কে, অ্যাকসেস আ রাইড এবং চালকেরা তখনো সেবা দিয়ে যাচ্ছেন শারীরিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের। তাদের কর্ম মাধ্যমে নেই কোনো ভয়, বরং সাহসের সঙ্গে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে চালকেরা করোনাভাইরাস মোকাবিলায় অসুস্থদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
মনে প্রচণ্ড ভয় নিয়ে লিভার টেস্ট করাতে সেদিন যখন অ্যাকসেস–আ–রাইডে মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে যাচ্ছিলাম, তখনই কথা হলো এমনই একজন অ্যাকসেস আ রাইড গাড়ি চালকের সঙ্গে। ইকুয়েডর থেকে আসা চালকের নাম ভিসেন্টি আলবার্টো। অ্যাকসেস আ রাইডে কাজ করছেন তিনি বেশ কয়েক বছর। শুরুতে তার গাড়িতে উঠতে অস্বস্তি লাগছিল, কেননা একই গাড়িতে আমার মতো আরও অনেকেই ওঠেন। ভয় ছিল, ‘যদি গাড়ি অপরিষ্কার থাকে এবং অন্য কোনো করোনাভাইরাস আক্রান্ত যাত্রী থাকে? কিংবা যদি গাড়িচালক নিজেই সতর্ক না থাকেন?’
তাই গ্লাভস-মাস্কের সঙ্গে সঙ্গে করে আমি লাইজল জার্ম কিলস স্প্রে নিয়ে গেলাম। ভাবলাম গাড়িতে উঠেই করোনাকে কাবু করতে স্প্রে করে নেব। কিন্তু গাড়িতে উঠে আমার ধারণা বদলে গেল। দেখলাম, আলবার্টোর গাড়িটি খুব পরিচ্ছন্ন। সুন্দর গন্ধ। সামনের আসন দুটির পেছনে সফট টিস্যু, কাশির ক্যানডি ও গ্লাভস। দুই আসনের মাঝখানে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল সেনিটাইজার, সামনের সিটে লাইজল স্প্রে এবং তার মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস। খুব অবাক হলাম একজন গাড়ি চালকের এমন সতর্কতা দেখে।
জানতে চাইলাম, এত সব কিসের জন্য? আলবার্টো বললেন, ‘রোজ অসুস্থ মানুষ আমার গাড়িতে বসেন। কার সঙ্গে কী রয়েছে বলা মুশকিল। তাই প্রতি যাত্রা শেষে আমি গাড়িতে জার্ম কিল করতে লাইজল স্প্রে করি। গাড়ি পরিষ্কার করি। আর টিস্যু, কাশির ক্যানডি, সেনিটাইজার, গ্লাভস এগুলো যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য।’ জিজ্ঞেস করলাম, গ্লাভস-মাস্ক পরেছেন কি আমাদের থেকে নিরাপদ থাকার জন্য? তিনি বললেন, ‘কথাটা ঠিক নয়। গ্লাভস-মাস্ক পরেছি দুজনের থেকেই আমরা দুজন নিরাপদ থাকার জন্য।’
কথার একপর্যায়ে আলবার্টো আরও বললেন, বর্তমানে করোনাভাইরাসের দ্রুত বিস্তারে গাড়ি চালকেরা আর্থিকভাবে হুমকির মুখে। তাদের ব্যবসা খুব মন্দা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, অনেকে আকসেস–আ–রাইডার্সরা এখন রাইড নিতেও ভয় পাচ্ছেন, এমনকি তাদের অনেকেই ভাবেন, এই গাড়ির চালকেরা সতর্কতা অবলম্বন করে যাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন না।
বিষয়টি দুঃখজনক হলেও এ ব্যাপারে যাত্রীদের দোষারোপ করা অমূলক। পারিপার্শ্বিক অবস্থাই এখন এমন যে, নিজের নিরাপত্তার প্রশ্নে সবাই আতঙ্কে থাকেন। এরপরও আমি দুবার অ্যাকসেস–আ–রাইড ব্যবহার করেছি মেডিকেলের প্রয়োজনে এবং প্রতিবারই দেখেছি খুব পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন এবং নিরাপত্তার সঙ্গে যাত্রীদের সেবা দিচ্ছে তারা।
শারীরিক অক্ষমতায় যারা অ্যাকসেস–আ–রাইড যাত্রী, তাদের নিরাপত্তা নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে আমাদের রাষ্ট্রপতি, গভর্নর, মেয়র সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি এমটিএর প্রদত্ত অ্যাকসেস-আ-রাইড ও তাদের যাত্রীদের জন্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই, ডাক্তার ভিজিটসহ প্রয়োজনীয় যেকোনো ভিজিটে অ্যাকসেস-আ-রাইড ট্রিপ নিতে সংকোচ বা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সবার সেবায় আ্যাকসেস–আ–রাইড বদ্ধপরিকর।
ইকুয়েডরের বংশোদ্ভূত ভিসেন্টি আলবার্টো তাঁর অসাধারণ আন্তরিকতা ও সতর্কতায় অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা বদলে দিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.